বিশ্বে দিন দিন ইকোট্যুরিজমের পরিধি বেড়েই চলেছে। আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদকে সুষ্ঠভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ইকোট্যুরিজমের উন্নয়ন সম্ভব। ইকোট্যুরিজম হচ্ছে কোন এলাকার স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও ব্যবস্থাপনায় পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে প্রকৃতিকে উপভোগ করার এমন একটি দায়িত্বপূর্ণ ভ্রমণ যা ঐ এলাকার জনগণের ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না এবং স্থানীয় জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। ইকোট্যুরিজমে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকায় তারা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় এবং অর্জিত আয়ের একটি অংশ ঐ এলাকার পরিবেশের উন্নয়ন ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের বিকাশে ব্যবহার হয়ে থাকে। পর্যটন বিচিত্রা দেশের পর্যটন উন্নয়নের নানা বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। এরই অংশ হিসেবে টাঙ্গুয়ার হাওরে ইকোট্যুরিজম নিয়ে এবারের প্রতিবেদন।
বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল অঞ্চল চেরাপুঞ্জির খুব কাছেই অবস্থিত রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর। সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলা অংশবিশেষ নিয়ে এ হাওরের অবস্থান। হাওরের চারপাশে রয়েছে ৮৮টি গ্রাম। ‘ছয় কুড়ি বিল আর নয় কুড়ি কান্দার’ সমন্বয়ে পরিচিত দৃষ্টিনন্দন বিলটির দৈর্ঘ্য ১১ ও প্রস্থ ৭ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরের ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকাকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ ঘোষণা করে। হাওরটি দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট এবং পৃথিবীর ১০৩১ তম রামসার সাইটের মর্যাদা পায় ২০০০ সালে। কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের কারণে হাওরটি উল্লেখযোগ্য। তা হলো: জলাভূমি পরিবেশের অনন্য উদাহরণ, জলচর পাখি, সংকটাপন্ন প্রজাতির মাছ, প্রাণী ও উদ্ভি দের আবাসস্থল এবং মা-মাছের উত্তম প্রজননস্থল। এই হাওরে ৫২টি বিলের মধ্যে ১৬টিতে সারা বছরই পানি থাকে। এই হাওরের ১২০টি কান্দায় প্রায় ষাট হাজার মানুষ বাস করে। এক হিসাবে এখানে ১৪১ প্রজাতির মাছ, ২০০ উদ্ভিদ, প্রায় পাঁচশত পাখি, স্তন্যপায়ী, সরীসৃপ ও উভচর ইত্যাদি বন্যপ্রাণী দেখা গেছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু রক্ষনাবেক্ষণ ও টেকসই নিশ্চিতকল্পে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় টাঙ্গুয়ার হাওরে একটি সমাজভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন, দাতা সংস্থা এসডিসি এর আর্থিক সহায়তায় ‘টাঙ্গুয়ার হাওর সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা’ প্রকল্প পরিচালনা করছে। মূলত শীতকালে হাওর বেড়ানোর উত্তম সময়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, এলাকার মানুষদের সংগ্রামী ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবন আর বিশাল বৃক্ষরাজি দেখতে চাইলে বর্ষাই উপযুক্ত সময়। হাওরটি ভ্রমণের জন্য সময় ও আর্থিক সঙ্গতি বিবেচনায় এক, দুই বা তিনদিনের ভ্রমণসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।
যাতায়াত
ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন মামুন ও শ্যামলী পরিবহন এবং মহাখালী থেকে এনা পরিবহনের বেশ ক’টি ডে-নাইট বাস ছয় ঘন্টায় সরাসরি সুনামগঞ্জে যায়। সেখানে শহরে হোটেলে দুই বেডের একটি রুমের ভাড়া ৩০০-৪৫০ টাকা। আর এসির ভাড়া প্রায় দ্বিগুন। শহর থেকে সুরমা নদী পার হয়ে ওপারে গিয়ে বৈঠাখালি বা মনিপুর ঘাটে গেলে সেখান থেকে ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যে কোন সময় মোটর সাইকেল বা লেগুনা ভাড়া করে তাহিরপুর যাওয়া যায়। এতে প্রায় এক ঘন্টা সময় লাগে। লেগুনাযোগে তাহিরপুর যেতে চাইলে সুনামগঞ্জ শহর সংলগ্ন সাহেববাড়ী ঘাট দিয়ে মনিপুর ঘাটে যেতে হবে। এতে প্রায় সময় লাগবে ২০ মিনিট। মনিপুর ঘাটে লেগুনা ও মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাওয়া যায়। আর মোটর সাইকেলযোগে তাহিরপুর যেতে চাইলে সুনামগঞ্জ শহর সংলগ্ন মল্লিকপুর ঘাট দিয়ে পাঁচ মিনিটে সুরমা নদী পার হয়ে বৈঠাখালী ঘাটে পৌঁছে সেখান থেকে মোটর সাইকেল ভাড়া করে তাহিরপুর যাওয়াটা সহজ। এরপর তাহিরপুর থেকে দেশী ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে দু’ঘণ্টায় টাঙ্গুয়ার হাওরে যাওয়া যায়। তাহিরপুরে একমাত্র সরকারি ডাকবাংলোতে খুবই সীমিত সুবিধা রয়েছে।
টাংগুয়ার হাওর ভ্রমণকালে পরামর্শ